Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
পেশাগত স্বাস্থ্য, শ্রমিক ও মালিক
ডাউনলোড

 

“শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি
উন্নয়নের শপথ করি”

হ্যা উন্নয়নের শপথই আমাদের করতে হবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে ধাবমান একটি ঘোড়া। যে ঘোড়া চলছে তার দুর্বিনীত শক্তিতে। মালিক-শ্রমিক যদি ঐক্য না থাকে তবে এ ঘোড়া আজ চলতে পারবে না। আমরা সকলে মিলে ঘোড়াকে চালু রাখতে পারি এই দোয়া নিয়েই মহান  মে দিবস-২০১৯ এর শুভেচ্ছা সকলের জন্যে।

         

          একটা সময় ছিলো যখন আমাদের শ্রমিকরা শুধু তাদের মজুরি-কর্মঘন্টা নিয়েই ভাবতো। তাদের দাবী বলতে শুধু এই টুকুই ছিলো। কিন্তু বর্তমান শ্রম বান্ধব সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় বাংলাদেশ সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছে। আজ আমাদের শ্রমিকের শুধু কর্মঘন্টা মজুরি নিয়ে ভাবছে না। আজ তারা তাদের পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা ভাবতে পাড়ছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে। আজ তাদের নিরাপত্তা বিষয়টি চলে এসেছে। নূন্যতম মজুরী কমিশনের সময় মতো বিভিন্ন সেক্টরে মজুরি প্রদান আজ শ্রমিক মহলে প্রশংসিত।

 

          এবার আসা যাক আমাদের শ্রমিক-মালিকের তাদের নিজ কর্মক্ষেত্রে কতটা সচেতন কিংবা কতটা তারা জ্ঞাত এর কিছু ব্যবচ্ছেদ নিয়ে।

 

          আমাদের শ্রমিকদের সচেতন হতে হবে। পেশাগত ব্যধি হলো নিরব ঘাতক। আজ যে রোগটা বয়সের কারণে তাচ্ছিল্য করা যেতে পারে সময়ের পরিক্রমায় সেটা অনেক বড় কষ্টের কারণ হতে পারে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেখি। ছোট একটা রাইস মিল। সেখানে আট-দশ জন লোক কাজ করে। মালিক নিজে থেকে তাদের কাজ করায়। রাইস মিলে প্রচুর ধুলা উড়ে। আপনি ইচ্ছা করলেই সেখান থেকে এই ধূলাবালি সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে পারবেন না। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে আধুনিক প্রযুক্তি। মিল মালিকের সামর্থ্য নেই। আধুনিক প্রযুক্তি সহজলভ্য করা পর্যন্ত এই সকল মিলতো চালাতে হবে। শ্রমিকদের কাজ করাতে হবে। ধান ভানতে শীবের গীতে চলে গেলাম। মূল কথাই আসা যাক। বিষয় হলো বেশির ভাগ শ্রমিক কোন প্রকার মাস্ক ব্যবহার করেন না। কিংবা তাদের গায়ে কোন পোশাক থাকে না। অর্থাৎ এক কথায় কোন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তার ব্যবহার করেন না। আপনি নিজ চোখে দেখলে শিউরে উঠবেন কারখানা চলাকালে ধূলায় তাদের চেহারা চেনা যায় না। তারপরও তারা ব্যবহার করেন না। তাদের কি সমস্যা হয় না? সমস্যা তাদের হয়। কিন্তু এটা যে তাদের সমস্যা তারা সেটাই বুঝতে পারেননা কিংবা বুঝতে চাননা। তাদের কিন্তু নিয়মিতভাবে সর্দি কাশি লেগে থাকে। ছোট খাটো পেটের পীড়া লেগেই থাকে। ফুসফুসে ধুলা প্রবেশ করে অনেক ক্ষতি হয়। এভাবেই তাদের জীবনীশক্তি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। একসময় তারা হয় শ্বাসকষ্ট না হয় অন্য কোন রোগে পড়ে। হয়তো তারা বুঝতেই পারেন না তাদের এই রোগের মূল কারণ হলো তাদের কর্মক্ষেত্র। তাদের অনেককেউ আমি প্রশ্ন করেছি যে, আপনি যে কোন প্রকার সুরক্ষা ছাড়া কাজ করছেন আপনার তো রোগ হবে।

          উত্তর:   ১। এসবে কিছু হয় না।

                   ২। কই ১০ বছর কাজ করছি কোন দিন কিছুই হয় নাই।

                   ৩। ভাই গরম লাগে।

                   ৪।  ব্যবহার করিতো, বাসায় রেখে আসছি (একটু চালাকি আরকি)

 

আমি জানি তাদের অজ্ঞতা। তারপরও তাদেরকে নিরলসভাবে শেখাতে চেষ্টা করি এর অপকারিতা। পেশাগত কারণেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের এই কাজটি নিয়মিতভাবে করতে হয়। তারপরও মানুষ হিসাবে কাজটি করতে বিবেক অন্যরকম তাগিদ দেয়।

 

আর মালিক, তিনিতো নিজেও জানেন না তিনি আস্তে আস্তে কি বিপদের মধ্যে মানুষদের ফেলছেন। তাকে যদি জিজ্ঞাসা করি যে, আপনি তাদেরকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেননি?

 

উত্তর:   ১। দিয়েছিতো, কিন্তু তারা ব্যবহার করে না।

          ২। ধুর কিছুই হবে না।
          ৩। আমি জানতাম না। আমাকে বলে যান কিভাবে কি করতে হবে। (সহজ সরল স্বীকারোক্তি)
 

আসুন আরেকটি উদাহরণ দেখি। আপনারা স মিল সেক্টরে কাজ করে এমন লোকদের দেখেছেন কি না। দেখবেন তারা যখন কাজ করেন তাদের শরীরের সর্বত্র ধূলা ময়লা লাগানো থাকে। কিন্তু এরাও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে ভিষণ অনিচ্ছুক। আমি অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছি কেন আপনারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন না?
 

উত্তর:   ১। আমাদের সহ্য হয়ে গেছে।
          ২। এগুলো পড়ে আমরা কাজ করতে পারিনা।
          ৩। ২০ বছর ধরেই কাজ করি কিছুই তো হয় না।
          ৪। বাবা মালিকতো দেয় না। (দোষ দেয়ায় এনার স্বভাব)

এরকম হাজারটা উত্তর তারা দিতে পারে। কিন্তু এটা যে ব্যবহার করা একান্ত জরুরী তারা সেটা কিন্তু একবারের জন্যে ও বলে না। স মিলে কর্মরত শ্রমিকদের বেশিরভাগ পেশীতে টান কিংবা শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যেঙ্গে আঘাত পান। অনেকেরই অঙ্গহানি হয় আবার অনেক সময় তারা মারা যান। কিন্তু এর মূল কারণটা নিয়ে তারা চিন্তা ভাবনা করেন না। সারা তার শ্বাসকষ্টে ভুগলেও বুঝতে পারেন না। অর্থাৎ তারা নিজেদের পেশাগত স্বাস্থ্যের প্রতি প্রচন্ড অনিহা।

 

রাইস মিলের মালিকদের মতো স মিল মালিকরা একই রকম উত্তর দেন। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো হয়তো স মিলের মূল মালিক সেটাকে ভাড়া দিয়েছেন কোন এক শ্রমিকের কাছে। উক্ত শ্রমিক নিজেই কাজ করছেন এবং অন্যদের ও কাজ করাচ্ছেন। সুতারাং কোন বিপদে অর্থাৎ দুর্ঘটনায় কাকে আপনি ধরবেন। যেখানে মালিক নিজেই শ্রমিক।

 

উপরোক্ত উদাহরণ দুটির মতো অনেক অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের এই বিষয়ে সমাধান দরকার।

সমস্যা সমাধানে প্রথমেই মালিককে এগিয়ে আসতে হবে।

 

মালিকদের করণীয়ঃ   শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য এর নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করার প্রধান দায়িত্ব মালিকের। আপনার একজন সুস্থ্য শ্রমিক দরকার। যদি কোন শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৫০ মোতাবেক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা মালিকের দায়িত্ব। কতটা ক্ষতিপূরণ দিবেন তা নির্ধারণ করে দিবে ধারা ১৫১ তে। সুতারাং নিজে আশু বিপদ হতে বাচতে কিংবা আপনার অধীন কর্মরত শ্রমিকের জান মালের নিরাপত্তা প্রদানের স্বার্থে হলেও নিচে কর্মকান্ড গ্রহণ করা যেতে পারে।

১। কারখানার ঝুঁকিগুলো পূর্বেই নির্ধারণ করা। যে ঝুঁকিগুলো আপনি মেরামত কিংবা অন্য উপায়ে প্রতিরোধ করতে পারবেন সেগুলো চিহ্নিত করা।


২। আপনি যে শ্রমিকে কারখানায় নিয়োগ প্রদান করছেন তিনি শারীরিকভাবে উক্ত কাজে ফিট আছেন কি না তা দেখা। যে শ্রমিক যে কাজের উপযুক্ত তাকে সে কাজ করাতে হবে।


৩। শতভাগ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আরামদায়ক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তাদেরকে প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করলে শ্রমিক অস্বস্তি অনুভব করবে না আবার কারখানার কাজটিও যথাযথভাবে কাজ করা যাবে।

 

৪। কারখানার কাজ করার পূর্বে তার উক্ত কাজের কোন প্রশিক্ষণ আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকলে উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক তাকে কাজে নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

 

৫। নিয়মিতভাবে শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ তার পারিবারিক কিংবা অর্থনৈতিক কোন ঝামেলা কিংবা সামাজীক কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। দেখতে হবে সে যে কাজটি করছে তাতে সে কোন প্রকার মানসিক চাপে আছে কি না। দেখতে হবে সে কোন হীনমন্যতায় ভুগছে কি না। 

৬। তদারকি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কিংবা অন্য সরকারি দপ্তরের পরিদর্শনকালে দেয়া নির্দেশ যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে।

 

৭। সতর্কতামূলক বিভিন্ন নির্দেশনা কারখানার বিভিন্ন স্থানে লাগাতে হবে ।

 

সর্বোপরি মালিককে তার কারখানা, শ্রমিক, তাদের পরিবার এবং দেশের স্বার্থে সদা সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি দুর্ঘটনায় এ দেশের অমূল্য ক্ষতি হয়ে যায়।

 

 

শ্রমিকের কর্তব্য এবং দায়িত্বঃ

 

১। আপনি কারখানায় কাজের জন্য উপর্যুক্ত কি না প্রথমে আপনাকে সেটা দেখতে হবে। কিঞ্চিৎ অসুস্থ হলেও কাজে যাওয়া উচিৎ নয়। কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে জানিয়ে প্রয়োজনে ছুটি নিতে হবে। আপনার সামান্য অসুস্থতা পরবর্তীতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
 

২। উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। সামান্যতম ঘাটতি থাকলেও কাজ করা যাবে না। মালিককে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করার জন্যে মৌখিক এবং লিখিত উভয়ভাবে বলতে হবে। শ্রম আইন মোতাবেক উক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানের পরও ব্যবহার না করলে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ প্রদানে মালিক বাধ্য নয়। আপনার জীবন এ রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ। সুতারাং তাকে হেফাজত করা একান্ত আপনার কর্তব্য।

 

৩। কাজ শুরুর পূর্বে কোন প্রকার ঝূঁকি থাকলে সাথে সাথে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

 

৪। কারখানায় ঝূঁকি সম্পর্কিত নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। কোন প্রকার গাফিলতি করা যাবে না।

 

৫। শ্রমিক নিজে কেবলমাত্র যে কাজের জন্যে নিয়োজিত সে কাজই করতে হবে। এর বাইরে কোন প্রকার কাজ করা যাবে না। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, ধরুন কোন শ্রমিক প্রোডাকশনের কাজ করে ইলেকট্রিক লাইনে কোন কাজে সমস্যা হলে সে কাজ করা যাবে না।

 

৬। মানসিক স্বাস্থ্য সর্বদা সুস্থ্য রাখতে হবে। 

 

 

সর্বোপরি আপনার জীবন রক্ষার্থে আপনাকেই সর্বোচ্চ সর্তকা থাকতে হবে। আপনার জীবন আপনার কাছে আপনার পরিবারে কাছে তথা এ জাতীর কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।

 

          শ্রমবান্ধব এ সরকারের শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছর ২৮ শে এপ্রিল জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালন করে। এ দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পালনের মাধ্যমে শ্রমিকদের সচেতন করার কাজ চলে।

 

          পরিশেষে একথাই বলতে চাই, শতভাগ নিরাপদ কর্মপরিবেশে কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক কাজ করুন, মালিক পান শতভাগ উৎপাদনশীলতা এবং দেশ এগিয়ে যাক উন্নতির চরম শিখরে।